-> সকালবেলা। ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১। রবিবারের সকালবেলা : আন্তর্জাতিক পাঠশালা।
আন্তর্বিদ্যাচর্চায় মন দিতে চান কয়েকজন অধ্যাপক। আর বিচিত্রবিদ্যার ‘সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত’ সকলকে ভাবাতেও চান তারা। আর এমন ইচ্ছের একটা মাধ্যম অবশ্যই হতে পারে পত্রিকা প্রকাশ। তাই-ই করেছেন অধ্যাপকমণ্ডলী। প্রথম দুটো সংখ্যা পত্রিকাটির নাম ছিল পাঠশালা। কিন্ত সরকারি পঞ্জিকরণ সংস্থান আরএনআই পছন্দ করেছে আন্তর্জাতিক পাঠশালা নামটি। ঝকঝকে সুমুদ্রিত পত্রিকাটি হাতে পেয়েই পড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। ঐতিহ্য লোকসংস্কৃতি, অর্থনীতি, সাহিত্য, মানবীবিদ্যার মতো নানা প্রসঙ্গে বিশ্লেষণী নিবন্ধগুলি পাঠককে তৃপ্ত করবে। হয়তো পাঠককে বিতর্কভূমিতে টেনে আনবে। মনুসংহিতা, ইসলামীয় সঙ্গীত, ঋত্বিক ঘটক, ফুকুশিমা পরমাণু বিপর্যয়, লোক চিকিৎসার মতো কম আলোচিত বিষয়ে অনেক তথ্যের জোগান দিয়েছে বিভিন্ন রচনা। তবে পরিকল্পনাগত দিক থেকে বেশ ভালো লাগে ‘চণ্ডীমণ্ডপ’-এর ভাবনা। আড্ডার মেজাজে বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে সুস্থ আলোচনাও উঠে আসছে এই পত্রিকায়। পড়তে পড়তে স্বাস্থ্যকর তর্কপ্রিয়তার এক পরিসর তৈরি হয়ে যায়। উদ্যোগটা প্রধানত কিছু অধ্যাপকের হলেও ‘আন্তর্জাতিক পাঠশালা’য় সবার নিমন্ত্রণ। অবশ্যই সাধু উদ্যোগ। এখন উদ্যোগটা ধরে রাখাই জরুরি।
->আজকাল। ১২ ডিসেম্বর, ২০১১। আয়না :
পাঠশালা ভারতের সুলতানি যুগে হাতিকে ব্যবহার করা হত শুধুই যুদ্ধের উপাদান হিসেবে। মুঘল যুগে হাতির গুরুত্ব বাড়িয়ে নানান কাজে ব্যবহার করতে শুরু করে। সেই কারণে শিল্পে-সাহিত্যেও তার প্রভাব পড়ে। এই দুই আমলের হাতির ব্যবহারর তুলনামূলক একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা দেখা গেল সদ্য প্রকাশ বৃহদাকার আন্তর্জাতিক পাঠশালা পত্রিকায়। অমিত রায়ের সুসম্পাদনায় পত্রিকাটিতে রয়েছে গ্রামীন দূর্গোৎসব, গণসঙ্গীত, বিবাহ প্রসঙ্গ, জল প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। রয়েছে স্বাতী গুহর উপন্যাস। এই সময়ের নবীন গল্পকারদের একগুচ্ছ গল্প। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, পরিভাষা বিভাগটিও। বাংলা পত্রিকায় বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে আন্তর্জাতিক পাঠশালা।
-> সংবাদ প্রতিদিন। ১৮ ডিসেম্বর, ২০১১। ছুটি : পাঠশালার নতুন পাঠ।
ক্রমশ অন্তঃস্থলে ডুবে যাওয়া। ক্রমশ গভীরে চলে যাওয়া। আন্তর্জাতিক পাঠশালা পড়ার সময় এই দুটো কথা প্রথমেই মনে হবে। বছরে চারবার প্রকাশিত এই পত্রিকা অন্য সব পত্রিকার থেকে একেবারে আলাদা।
প্রতিটি অধ্যায় স্বতন্ত্র। আলাদা বৈশিষ্ট্যের দাবি করে। দুটো মলাটের মধ্যে ভিন্ন বিষয়ের অবতারণা। স্মৃতিচর্চার মধ্যে ‘গ্রামীন দুর্গোৎসব : সেকাল একাল’। উত্তর বিশ্বাসের অভিজ্ঞতার নির্যাস্ পাঠকমনে এঁকে দেয় ভালোলাগার দৃশ্যপট। যে স্মৃতির প্রারম্ভ চমৎকার, সেই স্মৃতির সমাপ্তির আশা পাঠক কখনও করবেন না। ‘সোনারং কিশোরী-রোদ্দুরে ধুয়ে যাচ্ছে শরতের সকাল। প্রসন্ন উদার আকাশে টুকরো টুকরো মেঘের সন্তরণ। সবুজ ঝোপঝাড়ে ডাহুকের ক্রোকোধ্বনি আর বাবলাগাছের ডালে ভোরের দোয়েল পখি দোল খেয়ে শিস দিয়ে আলোয় ভিজে উড়ে যাচ্ছে অন্য কোনো বাগানে…’ উত্তর বিশ্বাসের হাত ধরে পাঠক প্রকৃতির রসে নিশ্চিন্তে অবগাহন করেন।
এক পৃষ্ঠা থেকে অন্য পৃষ্ঠায় সাবলীলভাবে চলে যাওয়ার মধ্যেই সাক্ষাৎ ঘটে দর্শনচর্চা, ইতিহাসচর্চা, লোকসংস্কৃতি, সাহিত্যচর্চা নামক স্তম্ভগুলির সঙ্গে। ইতিহাসচর্চায় দেবরাজ চক্রবর্তীর ‘মুঘল ভারতে হাতি : পরিবেশবাদী ইতিহাসচর্চার দৃষ্টিকোণ’ প্রবন্ধটি অসাধারণ। সুলতানি আমল থেকে মুঘল আমল পর্যন্ত হাতির দৃপ্ত পদচারণার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ (ছবি সহ) প্রাবন্ধিক তাঁর কলমে ফুটিয়ে তুলেছেন। রাজনীতি, সমাজ ও ধর্ম তিনক্ষেত্রে হাতির ব্যবহার, সুলতানি ও মুঘল সাম্রাজ্যের সুবিশাল ভুখণ্ডের ব্যপ্তিতে গজরাজকে নিয়ে সুলতান স্ম্রাটদের আগ্রহ, আতিশয্য – সবই তুলে ধরা হয়েছে স্বল্প পরিসরে। লোকসংস্কৃতির আঙিনায় রয়েছে আর্য্য চৌধুরীর ‘মালদা জেলার সাঞ্ঝ্যা পুজোর গান’ এবং সুজিত সুরের ‘বিয়ে নিয়ে সাতকাহন : আরও কিছু কথা’। অন্যরকম স্বাদ। অন্যরকম গন্ধ।
পররাষ্ট্রচর্চা বিষয়ে সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরীর মননশীল প্রবন্ধ ‘আরব দুনিয়ায় বসন্তের ছোঁয়া’য় আন্তর্জাতিক দুনিয়ার টালমাটাল অবস্থার বিবরণ দিয়েছেন। বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন ও মিশরে গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষদের আন্দোলন সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে সক্রিয়। সক্রিয়তার এই ইতিহাস উঠে এসেছে সব্যসাচীর কলমে। এই লেখাগুলি বাদ দিলে যা প্ড়ে থাকে তার মধ্যে রাখী মিত্রের ‘রবীন্দ্রনাথ-দ্বিজেন্দ্রলাল : এক কিংবদন্তী বন্ধুত্ব’, সোহারাব হোসেনের ‘পথের পাঁচালী : শিল্পবিশ্বাসের পাল্টা স্রোত ও একটি ঔপন্যাসিক বিদ্রোহ’ এবং সন্দীপন সেনের ‘জটায়ু চরিত’ উল্লেখযোগ্য। কবিতার সরণিতে অনেক কবিতা। উপন্যাস লিখেছেন স্বাতী গুহ। গল্পে প্রচেত গুপ্ত, সর্বজিৎ সরকার, তৃষ্ণা বসাক প্রমুখ। কয়েকটি অনুবাদ গল্পও রয়েছে। প্রচ্ছদ ভালো। অনেক বইয়ের ভিড়ে আন্তর্জাতিক পাঠশালা অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়বে না একথা জোর দিয়ে বলা যায়।
-> আনন্দবাজার পত্রিকা। ৭ জানুয়ারি, ২০১২। পুস্তক পরিচয়।
দর্শন ইতিহাস লোকসংস্কৃতি সাহিত্য বিজ্ঞান অর্থনীতি পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে চর্চা আন্তর্জাতিক পাঠশালা-য়। স্মৃতিচর্চায় ‘গ্রামীন দুর্গোৎসব : সেকাল একাল’ নিয়ে উত্তর বিশ্বাসের লেখাটি উল্লেখ্য।
-> আজকাল। ১৮ জুন, ২০১২। আয়না : অবিস্মরণীয়েষু সুকুমার ।
‘বিশুদ্ধ উচ্চাঙ্গের সঙ্গীত যে রকম শুদ্ধমাত্র ধ্বনির ওপর নির্ভর করে, তার সঙ্গে কথা জুড়ে দিয়ে গীত বানাতে হয় না, ঠিক তেমনই সুকুমার রায়ের বহু ছড়া স্রেফ হাস্যরস, তাতে অ্যাকশন নেই, গল্প নেই অর্থাৎ দ্বিতীয় বস্তুর স্থান নেই, প্রয়োজনও নেই। এ বড় কঠিন কর্ম। এ কর্ম তিনিই পারেন, যার বিধিদত্ত ক্ষমতা আছে।‘ লিখেছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলি। শিশু মনস্তত্ত্বের নিরিখে সুকুমার সাহিত্যের সমকালীন তাৎপর্য উন্মোচন করতে চেয়েছেন সোমদত্তা ঘোষ কর তার ‘নাইকো মানে নাইকো সুর’ প্রবন্ধে। সুকুমারের ১২৫ জন্মজয়ন্তীতে আন্তর্জাতিক পাঠশালা বিশেষ ক্রোড়পত্রে একগুচ্ছ সুপাঠ্য নিবন্ধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁকে। দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের নিবন্ধের বিষয় সুকুমারের রচনার প্রস্তুতিপর্ব এবং ‘আবোল তাবোল’-এর তথ্যনিষ্ঠ নির্মাণ বৃত্তান্ত। তাঁর ছড়া-ছবির পরিপূরক বা যুগল বন্দিশের ব্যাখ্যা করেছেন সৌমিক নন্দী মজুমদার।
-> সকালবেলা সাপ্তাহিকী। ৮ জুলাই, ২০১২। লিটল ম্যাগাজিন
শিশু-কিশোরদের মনে বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ জাগানোর জন্য সুকুমার রায় বিজ্ঞানের উপর নানা চিত্তাকর্ষক প্রবন্ধ রচনা করেন। কিন্তু এসব ছাড়াও তাঁর যে আর একটি দিক ছিল যেটি বোধহয় ক্রমশই বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। সেটি হল তাঁর কবিতা। মূলত এই আক্ষেপকে সামনে রেখে তাঁর ১২৫ বর্ষ উদযাপনের কাল স্মরণে আন্তর্জাতিক পাঠশালা তাদের সাম্প্রতিক সংখ্যায় একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। … সুকুমার রায়ের উপর ক্রোড়পত্রটি বেশ আকর্ষণীয় ও তথ্যসমৃদ্ধ হয়েছে। সবচেয়ে নজর কেড়েছে দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের লেখা, ‘লেখক সুকুমার রায় : গোড়ার কথা ও ‘আবোল তাবোল’ প্রসঙ্গ’ প্রবন্ধটি। সঙ্গে প্রবন্ধকারের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে দেওয়া কিছু দুর্লভ চিত্রও মান বাড়িয়েছে ক্রোড়পত্রটির। এই বিষয়ে অন্যান্য লেখাগুলির মধ্যে স্বপন মজুমদারের ও নীলাঞ্জনা ভট্টাচার্যের লেখা দুটি উল্লেখযোগ্য।
-> সকালবেলা। ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১। রবিবারের সকালবেলা : আন্তর্জাতিক পাঠশালা।
আন্তর্বিদ্যাচর্চায় মন দিতে চান কয়েকজন অধ্যাপক। আর বিচিত্রবিদ্যার ‘সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত’ সকলকে ভাবাতেও চান তারা। আর এমন ইচ্ছের একটা মাধ্যম অবশ্যই হতে পারে পত্রিকা প্রকাশ। তাই-ই করেছেন অধ্যাপকমণ্ডলী। প্রথম দুটো সংখ্যা পত্রিকাটির নাম ছিল পাঠশালা। কিন্ত সরকারি পঞ্জিকরণ সংস্থান আরএনআই পছন্দ করেছে আন্তর্জাতিক পাঠশালা নামটি। ঝকঝকে সুমুদ্রিত পত্রিকাটি হাতে পেয়েই পড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। ঐতিহ্য লোকসংস্কৃতি, অর্থনীতি, সাহিত্য, মানবীবিদ্যার মতো নানা প্রসঙ্গে বিশ্লেষণী নিবন্ধগুলি পাঠককে তৃপ্ত করবে। হয়তো পাঠককে বিতর্কভূমিতে টেনে আনবে। মনুসংহিতা, ইসলামীয় সঙ্গীত, ঋত্বিক ঘটক, ফুকুশিমা পরমাণু বিপর্যয়, লোক চিকিৎসার মতো কম আলোচিত বিষয়ে অনেক তথ্যের জোগান দিয়েছে বিভিন্ন রচনা। তবে পরিকল্পনাগত দিক থেকে বেশ ভালো লাগে ‘চণ্ডীমণ্ডপ’-এর ভাবনা। আড্ডার মেজাজে বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে সুস্থ আলোচনাও উঠে আসছে এই পত্রিকায়। পড়তে পড়তে স্বাস্থ্যকর তর্কপ্রিয়তার এক পরিসর তৈরি হয়ে যায়। উদ্যোগটা প্রধানত কিছু অধ্যাপকের হলেও ‘আন্তর্জাতিক পাঠশালা’য় সবার নিমন্ত্রণ। অবশ্যই সাধু উদ্যোগ। এখন উদ্যোগটা ধরে রাখাই জরুরি।
->আজকাল। ১২ ডিসেম্বর, ২০১১। আয়না :
পাঠশালা ভারতের সুলতানি যুগে হাতিকে ব্যবহার করা হত শুধুই যুদ্ধের উপাদান হিসেবে। মুঘল যুগে হাতির গুরুত্ব বাড়িয়ে নানান কাজে ব্যবহার করতে শুরু করে। সেই কারণে শিল্পে-সাহিত্যেও তার প্রভাব পড়ে। এই দুই আমলের হাতির ব্যবহারর তুলনামূলক একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা দেখা গেল সদ্য প্রকাশ বৃহদাকার আন্তর্জাতিক পাঠশালা পত্রিকায়। অমিত রায়ের সুসম্পাদনায় পত্রিকাটিতে রয়েছে গ্রামীন দূর্গোৎসব, গণসঙ্গীত, বিবাহ প্রসঙ্গ, জল প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। রয়েছে স্বাতী গুহর উপন্যাস। এই সময়ের নবীন গল্পকারদের একগুচ্ছ গল্প। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, পরিভাষা বিভাগটিও। বাংলা পত্রিকায় বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে আন্তর্জাতিক পাঠশালা।
-> সংবাদ প্রতিদিন। ১৮ ডিসেম্বর, ২০১১। ছুটি : পাঠশালার নতুন পাঠ।
ক্রমশ অন্তঃস্থলে ডুবে যাওয়া। ক্রমশ গভীরে চলে যাওয়া। আন্তর্জাতিক পাঠশালা পড়ার সময় এই দুটো কথা প্রথমেই মনে হবে। বছরে চারবার প্রকাশিত এই পত্রিকা অন্য সব পত্রিকার থেকে একেবারে আলাদা। প্রতিটি অধ্যায় স্বতন্ত্র। আলাদা বৈশিষ্ট্যের দাবি করে। দুটো মলাটের মধ্যে ভিন্ন বিষয়ের অবতারণা। স্মৃতিচর্চার মধ্যে ‘গ্রামীন দুর্গোৎসব : সেকাল একাল’। উত্তর বিশ্বাসের অভিজ্ঞতার নির্যাস্ পাঠকমনে এঁকে দেয় ভালোলাগার দৃশ্যপট। যে স্মৃতির প্রারম্ভ চমৎকার, সেই স্মৃতির সমাপ্তির আশা পাঠক কখনও করবেন না। ‘সোনারং কিশোরী-রোদ্দুরে ধুয়ে যাচ্ছে শরতের সকাল। প্রসন্ন উদার আকাশে টুকরো টুকরো মেঘের সন্তরণ। সবুজ ঝোপঝাড়ে ডাহুকের ক্রোকোধ্বনি আর বাবলাগাছের ডালে ভোরের দোয়েল পখি দোল খেয়ে শিস দিয়ে আলোয় ভিজে উড়ে যাচ্ছে অন্য কোনো বাগানে…’ উত্তর বিশ্বাসের হাত ধরে পাঠক প্রকৃতির রসে নিশ্চিন্তে অবগাহন করেন। এক পৃষ্ঠা থেকে অন্য পৃষ্ঠায় সাবলীলভাবে চলে যাওয়ার মধ্যেই সাক্ষাৎ ঘটে দর্শনচর্চা, ইতিহাসচর্চা, লোকসংস্কৃতি, সাহিত্যচর্চা নামক স্তম্ভগুলির সঙ্গে। ইতিহাসচর্চায় দেবরাজ চক্রবর্তীর ‘মুঘল ভারতে হাতি : পরিবেশবাদী ইতিহাসচর্চার দৃষ্টিকোণ’ প্রবন্ধটি অসাধারণ। সুলতানি আমল থেকে মুঘল আমল পর্যন্ত হাতির দৃপ্ত পদচারণার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ (ছবি সহ) প্রাবন্ধিক তাঁর কলমে ফুটিয়ে তুলেছেন। রাজনীতি, সমাজ ও ধর্ম তিনক্ষেত্রে হাতির ব্যবহার, সুলতানি ও মুঘল সাম্রাজ্যের সুবিশাল ভুখণ্ডের ব্যপ্তিতে গজরাজকে নিয়ে সুলতান স্ম্রাটদের আগ্রহ, আতিশয্য – সবই তুলে ধরা হয়েছে স্বল্প পরিসরে। লোকসংস্কৃতির আঙিনায় রয়েছে আর্য্য চৌধুরীর ‘মালদা জেলার সাঞ্ঝ্যা পুজোর গান’ এবং সুজিত সুরের ‘বিয়ে নিয়ে সাতকাহন : আরও কিছু কথা’। অন্যরকম স্বাদ। অন্যরকম গন্ধ। পররাষ্ট্রচর্চা বিষয়ে সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরীর মননশীল প্রবন্ধ ‘আরব দুনিয়ায় বসন্তের ছোঁয়া’য় আন্তর্জাতিক দুনিয়ার টালমাটাল অবস্থার বিবরণ দিয়েছেন। বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন ও মিশরে গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষদের আন্দোলন সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে সক্রিয়। সক্রিয়তার এই ইতিহাস উঠে এসেছে সব্যসাচীর কলমে। এই লেখাগুলি বাদ দিলে যা প্ড়ে থাকে তার মধ্যে রাখী মিত্রের ‘রবীন্দ্রনাথ-দ্বিজেন্দ্রলাল : এক কিংবদন্তী বন্ধুত্ব’, সোহারাব হোসেনের ‘পথের পাঁচালী : শিল্পবিশ্বাসের পাল্টা স্রোত ও একটি ঔপন্যাসিক বিদ্রোহ’ এবং সন্দীপন সেনের ‘জটায়ু চরিত’ উল্লেখযোগ্য। কবিতার সরণিতে অনেক কবিতা। উপন্যাস লিখেছেন স্বাতী গুহ। গল্পে প্রচেত গুপ্ত, সর্বজিৎ সরকার, তৃষ্ণা বসাক প্রমুখ। কয়েকটি অনুবাদ গল্পও রয়েছে। প্রচ্ছদ ভালো। অনেক বইয়ের ভিড়ে আন্তর্জাতিক পাঠশালা অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়বে না একথা জোর দিয়ে বলা যায়।
-> আনন্দবাজার পত্রিকা। ৭ জানুয়ারি, ২০১২। পুস্তক পরিচয়।
দর্শন ইতিহাস লোকসংস্কৃতি সাহিত্য বিজ্ঞান অর্থনীতি পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে চর্চা আন্তর্জাতিক পাঠশালা-য়। স্মৃতিচর্চায় ‘গ্রামীন দুর্গোৎসব : সেকাল একাল’ নিয়ে উত্তর বিশ্বাসের লেখাটি উল্লেখ্য।
-> আজকাল। ১৮ জুন, ২০১২। আয়না : অবিস্মরণীয়েষু সুকুমার ।
‘বিশুদ্ধ উচ্চাঙ্গের সঙ্গীত যে রকম শুদ্ধমাত্র ধ্বনির ওপর নির্ভর করে, তার সঙ্গে কথা জুড়ে দিয়ে গীত বানাতে হয় না, ঠিক তেমনই সুকুমার রায়ের বহু ছড়া স্রেফ হাস্যরস, তাতে অ্যাকশন নেই, গল্প নেই অর্থাৎ দ্বিতীয় বস্তুর স্থান নেই, প্রয়োজনও নেই। এ বড় কঠিন কর্ম। এ কর্ম তিনিই পারেন, যার বিধিদত্ত ক্ষমতা আছে।‘ লিখেছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলি। শিশু মনস্তত্ত্বের নিরিখে সুকুমার সাহিত্যের সমকালীন তাৎপর্য উন্মোচন করতে চেয়েছেন সোমদত্তা ঘোষ কর তার ‘নাইকো মানে নাইকো সুর’ প্রবন্ধে। সুকুমারের ১২৫ জন্মজয়ন্তীতে আন্তর্জাতিক পাঠশালা বিশেষ ক্রোড়পত্রে একগুচ্ছ সুপাঠ্য নিবন্ধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁকে। দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের নিবন্ধের বিষয় সুকুমারের রচনার প্রস্তুতিপর্ব এবং ‘আবোল তাবোল’-এর তথ্যনিষ্ঠ নির্মাণ বৃত্তান্ত। তাঁর ছড়া-ছবির পরিপূরক বা যুগল বন্দিশের ব্যাখ্যা করেছেন সৌমিক নন্দী মজুমদার।
-> সকালবেলা সাপ্তাহিকী। ৮ জুলাই, ২০১২। লিটল ম্যাগাজিন
শিশু-কিশোরদের মনে বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ জাগানোর জন্য সুকুমার রায় বিজ্ঞানের উপর নানা চিত্তাকর্ষক প্রবন্ধ রচনা করেন। কিন্তু এসব ছাড়াও তাঁর যে আর একটি দিক ছিল যেটি বোধহয় ক্রমশই বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। সেটি হল তাঁর কবিতা। মূলত এই আক্ষেপকে সামনে রেখে তাঁর ১২৫ বর্ষ উদযাপনের কাল স্মরণে আন্তর্জাতিক পাঠশালা তাদের সাম্প্রতিক সংখ্যায় একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। … সুকুমার রায়ের উপর ক্রোড়পত্রটি বেশ আকর্ষণীয় ও তথ্যসমৃদ্ধ হয়েছে। সবচেয়ে নজর কেড়েছে দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের লেখা, ‘লেখক সুকুমার রায় : গোড়ার কথা ও ‘আবোল তাবোল’ প্রসঙ্গ’ প্রবন্ধটি। সঙ্গে প্রবন্ধকারের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে দেওয়া কিছু দুর্লভ চিত্রও মান বাড়িয়েছে ক্রোড়পত্রটির। এই বিষয়ে অন্যান্য লেখাগুলির মধ্যে স্বপন মজুমদারের ও নীলাঞ্জনা ভট্টাচার্যের লেখা দুটি উল্লেখযোগ্য।